বাংলা লোকসংগীতের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী ও জাতীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম ভারতের তামিল নাড়ু প্রদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীতের ওপর সন্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন বলে দেশের গণমাধ্যম জুড়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
কিন্তু মমতাজ বেগমের ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের বিষয়টি নিয়ে দেখা দিয়েছে সন্দেহ। দেশের খ্যাতনামা একজন সংগীতজ্ঞের সন্মানসূচক ডিগ্রি লাভ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করলেও সংশ্লিষ্ট ডিগ্রি ও ডিগ্রিদাতা প্রতিষ্ঠান নিয়ে দেখা দিয়েছে সন্দেহ।
সোমবার (১২ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে মমতাজ বেগম তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে উল্লেখ করেন, ‘তিনি ভারতের তামিল নাড়ু প্রদেশের ‘গ্লোবাল হিউম্যান পিস বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে গত ১০ এপ্রিল ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন’।
সাথে যুক্ত একটি ছবিতে দেখা যায়, ১০ এপ্রিল সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত দ্য সাউথ ইন্ডিয়া টেক্সটাইল রিসার্চ এসোসিয়েশন-এর অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠানটি হয়। ছবিতে থাকা ব্যানারের শূরুতেই লেখা আছে কোভিড-১৯ সচেতনতা কর্মসূচি (covid-19 awarness program)। যার আয়োজন করে পিপল ফোরাম অব ইন্ডিয়া ভারত সেবক সমাজ। সাথে ছিল গ্লোবাল হিউম্যান পিস বিশ্ববিদ্যালয়।
এদিকে ভারতের সরকারি ওয়েবসাইটে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় মমতাজ বেগমের দাবি করা প্রদেশে এই নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজে পাওয়া যায়নি। এমন কি সমগ্র ভারতের তালিকাতেও খোঁজ মিলেনি বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্বের প্রায় সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেইজ থাকলেও গ্লোবাল হিউম্যান পিস ইউনিভার্সিটি নামে কোনো পেইজ খোঁজে পাওয়া যায়নি।
মমতাজের উল্লেখ করা গ্লোবাল হিউম্যান পিস ইউনিভার্সিটির অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে গিয়ে এর কোনো প্রতিষ্ঠা সন ও তারিখ উল্লেখ পাওয়া যায়নি। বিশ্বের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের ডোমেইন ডট এডু (.edu) দিয়ে থাকলেও এর নামের শেষে রয়েছে ডট ওআরজি (.org). যা কেবল সংগঠন সমূহের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়।
এদিকে ভারতের বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমে গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক গ্লোবাল পিস বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থের বিনিময়ে ডক্টরেট ডিগ্রি বিক্রয় করা হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর এমন একটি অনুষ্ঠান বন্ধ করে স্থানীয় পুলিশ। সেখান থেকে দু’জনকে পুলিশ হেফাজতেও নেওয়া হয়েছিল।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিগুলি অর্থের জন্য লোকদের কাছে বিক্রি করা হয়। স্থানীয় একটি হোটেলে ভারতের জাতীয় মানবাধিকার শান্তি কাউন্সিল এবং আন্তর্জাতিক গ্লোবাল পিস বিশ্ববিদ্যালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। হরিহার বিধায়ক রামাপ্পা এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন।
অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেওয়া পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, বিধায়কও এই ডিগ্রির প্রার্থী ছিলেন। রাজ্য জুড়ে এবং তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে মোট ১৪২ জন প্রার্থী এই ডিগ্রি অর্জনের জন্য জড়ো হয়েছিল। বেশিরভাগ প্রার্থী ডিগ্রির জন্য ২০,০০০ টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ প্রদান করেছিলেন।