বিশেষ প্রতিবেদক
কক্সবাজারের উখিয়ায় পুলিশের এক সদস্যের সঙ্গে প্রেমের পর বিয়ের প্রস্তাব তোলায় থানায় বেঁধে নির্মম নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী এক কলেজছাত্রী মামলা করেছেন। উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আক্তার, কনস্টেবল মো. সুমন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল ইসলাম ও এএসআই মো. শামীমকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ ওই নারী মামলাটি করেন। তিনি কক্সবাজারের একটি বেসরকারি কলেজের ছাত্রী। তার বাড়ি মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ায়।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
বাদী নারী নির্যাতন আইনের ৯ (১) তৎসহ দণ্ডবিধি আইনের ৩২৩/৩২৪/৩৪২/৩৭৯/৫০৬ ধারা মতে অভিযোগ আনেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই ট্রাইব্যুনালের পি.পি অ্যাডভোকেট একরামুল হুদা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কনস্টেবল সুমন উখিয়া মরিচ্যা চেকপোস্টে দায়িত্বরত অবস্থায় ওই মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে চলতি বছরের ৭ জুলাই রাতে বিয়ের প্রস্তাব তোলায় উখিয়া থানায় নির্যাতনের শিকার হন ওই ছাত্রী।
মামলার বাদী জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সূত্র ধরে পুলিশ কনস্টেবল সুমনের সঙ্গে তার সর্ম্পক হয় প্রায় এক বছর আগে। এরইমধ্যে তাদের বেশ কয়েকবার সরাসরি দেখা হয়। শারীরিক সম্পর্কও হয়ে যায়। উখিয়া মরিচ্যা চেকপোস্টে দায়িত্বের সুবাদে খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে সুমনসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য থাকেন।সর্বশেষ ওই কক্ষে সুমনের সঙ্গে দেখা করতে যান ওই ছাত্রী। সেখানেও তাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপর থেকে কিছুদিন যোগাযোগ বন্ধ রাখেন সুমন। এক পর্যায়ে ৭ জুলাই (মঙ্গলবার) সকালে কথা হয় সুমনের সাথে। সুমনের কথা মতো উখিয়ার মরিচ্যায় যান তার প্রেমিকা। সেখানে তাদের বিয়ের ব্যাপারে অনেক কথা হয়। এরপর ছাত্রীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে বিকালের দিকে উখিয়ার ইনানী নিয়ে যান সুমন। সেখানে তারা উঠেন সুমনের কয়েকজন বন্ধুর কক্ষে। বন্ধুদের সামনেও তাদের বিয়ের বিষয়ে কথা ওঠে। কথার এক পর্যায়ে সুমন ও তার প্রেমিকার মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। সেখানে তারা সিদ্ধান্ত নেন মরিচ্যা গিয়ে কাজী ডেকে বিয়ে করবেন। মরিচ্যায় গিয়ে বিয়ের নামে নানা তালবাহানা শুরু করেন সুমন। ৭ জুলাই রাত ১০ টার দিকে প্রেমিকাকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে উধাও হয়ে যান তিনি।
ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘যখন সুমন রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে উধাও হয়ে যায়; তখন রাত ১১টার দিকে আমি কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন স্যারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে বিষয়টি অবগত করি। স্যার উখিয়া থানায় যোগাযোগ করে সেখানে যেতে বলেন। স্যারের কথায় আমি রাত সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়া থানায় হাজির হয়ে ওসি মর্জিনা আক্তারকে সব বিষয় খুলে বলি। বলার পর থেকে আমার ওপর নির্যাতন শুরু করেন।’
ছাত্রী বলেন, ‘প্রথম দফায় আমাকে ব্যাপক মারধর করেন ওসি নিজেই। এরপর দ্বিতীয় দফায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য (পুরুষ) আমাকে মারধর করেন। পুলিশের ব্যাপক মারধরে আমার সারা শরীরে আঘাত হয়। শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তক্ষরণও হয়। পুরো শরীরজুড়ে পুলিশি নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। হিজাব দিয়ে চোখ বেঁধে এবং হাতকড়া পরিয়ে মারধর করা হয়। পুরুষ পুলিশ সদস্যরা তলপেটে লাথি মেরেছে বেশি। যার কারণে পরনের জামাও রক্তাক্ত হয়ে যায়। শারীরিক নির্যাতনের সময় অনেক মন্দ গালিগালাজও করা হয়।’
নির্যাতিত ছাত্র বলেন, ‘কনস্টেবল সুমনের সাথে যোগাযোগ না রাখার হুমকি দিয়ে দফায় দফায় মারধর করা হয়। এমনকি ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে চালান করে দেয়ার হুমকিও দেন ওসি। ইয়াবার কথা শুনে তাদের সব কথায় রাজি হই। এর পরদিন ৮ জুলাই (বুধবার) আমার বাবার সাথে যোগাযোগ করেন ওসি। বাবা উখিয়া থানায় এসে আমাকে নিয়ে যান। কিন্তু আমার মোবাইল ফোনটি রেখে দেন ওসি।’
ছাত্রী বলেন, ‘বাসায় এসে চকরিয়ার একটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। ৯ জুলাই ডাক্তার দেখাই চকরিয়ার একটি হাসপাতালে। আঘাতের চিহ্ন দেখে ডাক্তারও রীতিমত অবাক হন। এরপর কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিই।’
ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘সুমন দেখে শুনে আমার সাথে সম্পর্ক করেছে। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শারীরিক সম্পর্কও করেছে। তাই বলে আমাকে এমন নির্যাতন করবে মেনে নিতে পারছি না। নারী ওসি নিজে মেরেছেন ঠিক আছে; কিন্তু পুরুষ পুলিশের দ্বারা নির্মম মারধর করা হয়েছে। আমার শরীর দেখলে বোঝা যায় কেমন নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। আমি এর বিচার চাই। বিচারের জন্য আমি আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি।’