উত্তরণ ডেস্ক:
নিভৃতে, নির্জনে ,দরজা বন্ধ করে কর্মস্থলের এক কোণে বসে নিজের প্রতিচ্ছবি নিজে দেখে অশ্রু দিয়ে নিজের মেধাকে ভাসিয়ে দেয় শত শত অফিসার। একথা পৃথিবীর কে না জানে। পদোন্নতি বিহীন কর্মজীবন একটি ভল্লুকের জীবনের চেয়েও যে অগোছালো এবং অস্থির তা তারাই একমাত্র বোঝে।
একই পোশাক সমপরিমাণ জায়গাতেই যেতে হয় অন্যের কাঁধে ভর করে !!!?? কিন্তু এ দিনের কথা চাকরির প্রথম দিনে মণ্ডলদের মনে পরেনা।
তকদির মন্ডলের স্থানীয় ভাষায় নন মানেজমেন্ট ডিপ্লোমা থাকলেও তিনি উক্ত কোম্পানীর ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল। দুজনের চাকরি একসাথেই হলেও দুজনের জীবন যাপন বিস্তর ফারাক।
সত্যি সত্যি কেউ বিশ্বাস করবেন না। হরিণ কখনো সোনার হয়না। হয়তোবা সোনার হরিণ বলতে দুর্লভ বস্তু বা অতি প্রয়োজনীয় কিন্তু সহজে পাওয়া যায় না এমন জিনিস। পৃথিবীর অনেক মানুষের কাছেই চাকরি হলো সোনার হরিণ।
বোম্বা দ্বীপের হাম্বা ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এ চাকুরী করে তকদীর আলী ও তদবির মন্ডল। চাকুরি নিয়োগ পরীক্ষায় তকদীর আলী ভাল করলেও ভাল পোষ্টিং পায় তদবির মন্ডল। ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি হলেও ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে মাস্টার্স পাস করা তকদির আলীর ভাগ্যে পদোন্নতি জোটেনি 26 বছরে একটিও।
তদবির মন্ডলের স্থানীয় ভাষায় নন মানেজমেন্ট ডিপ্লোমা থাকলেও তিনি উক্ত কোম্পানীর ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল। দুজনের চাকরি একসাথেই হলেও দুজনের জীবন যাপন বিস্তর ফারাক।
ছাত্রজীবনের তকদির আলী, তদবির মন্ডল এর চেয়ে অনেক ভালই ছিলেন। একই পদে যোগদান করে ও তকদির আলী এখন রয়ে গেছেন সেখানেই। কোম্পানির প্রিন্সিপালকে সকাল-বিকেল সেলুট দিয়ে তকদির আলীকে মাসিক বেতনের জন্য হাজিরা দিতে হয়।
আনন্দের বিষয় না দুঃখের বিষয় তা বলা যাবে না। তকদির আলীর সন্তান উক্ত কোম্পানীর অফিসার পদে ভর্তি হয়ে সে বাবার চেয়েও 2 পদ উপরে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি সিনিয়র অফিসার পদে সমাসীন।
তকদির আলীর আরো তিন সন্তান এবং সংসার চালানোর জন্য উক্ত কোম্পানীর পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা মাসিক 40 হাজার পাউন্ড বেতন খুবই দরকার।
এটি না হলে তার স্ত্রী সন্তানের ভরণপোষণ এবং নিজের জীবন যাপন একেবারেই অসম্ভব হবে।
পাশাপাশি তদবির মন্ডলের মাথায় কিছু না থাকলেও ডিপ্লোমা ডিগ্রীর সুবাদে তার মামা মরহুম ধান্দা সরকারের করে যাওয়া সুপারিশে আগামী দুই বছরে কোম্পানির কর্ণধার হতে আর বাধা নেই।
এদিকে তকদির আলীর মত শত শত লোক সকাল-বিকেল তদবির মন্ডল দের মাথানত করে সম্মান আর মোসাহেবি করেই যাচ্ছে।
একই সাথে চাকরিতে প্রবেশের দাবিতে তকদির আলী তকদিরের দোষ দিয়ে অবশেষে জীবনের তাগিদে বাধ্য হয়েই তদবীর মন্ডলের কাছে ছোট্ট একটি তদবির নিয়ে হাজির হলেন।
উক্ত দ্বীপ দীপ হতে তার বাড়িতে যেতে তিন দিনের ভ্রমণপথ এবং 10 হাজার পাউন্ড খরচ হয়ে যায়। বাৎসরিক কয়েকদিনের ছুটি যেতে আসতেই চলে যায়। বছরে দুইবার স্ত্রী-সন্তানকে দেখতে গেলে চার মাসের বেতন ও ব্যয় হয়।
স্ত্রী সন্তানদের সুন্দরভাবে জীবন যাপনের জন্য অবশেষে তদবির মন্ডল এর নিকট অনুরোধ করলেন তার নিকটস্থ কোনো স্থানে বদলি করার জন্য।
কিন্তু বিধিবাম তকদির আলীর তকদিরে বদলি পদোন্নতি কোনটাই নেই। তদবির মন্ডল ধান্দা মিয়ার ভাগ্নে। মিস্টার যোগাযোগ বাবুর সাথে যোগাযোগ করে তকদির আলীর আরো দূরে বদলির ব্যবস্থা করে। এমন যোগ্য কয়েকজনের বদলির কারণে হাম্বা ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড কোম্পানি পরের বছরই দেউলিয়া ঘোষণা হয়।
চার বছর পর তকদির অবসরে যাবে আর এ সময়ের মধ্যে তার ছেলে উক্ত ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সহকারি পরিচালক হবে। সন্তানের চাকুরীতে পদবী প্রাপ্তির কারণে আর অবসরে নিজের টাকার প্রয়োজনে চাকরিটা কে সোনার হরিণ বানিয়ে আরো শক্ত করে ধরে রাখলেন।
পদোন্নতি, স্থানচ্যুতি, বদলি কোনটাই না হলেও চাকুরী তার কাছে সোনার হরিণ। অবসরের সম্ভাব্য টাকা আর ছেলের সম্ভাব্য পদোন্নতি তার কাছে সোনার হরিণ হয়েই থাকলো।
যারা চাকরীর উপর নির্ভরশীল, যারা চাকরি করেন তারা কাঙ্খিত কর্মস্থলে বদলি এবং যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি না পেলে তাদের” সোনার হরিণের” বাস্তব চেহারা কেমন হয় সেটা আয়নাতে দাঁড়ালে দেখা যায়!!
চোখের সামনে যদি নিজের চেয়ে কম যোগ্যতার লোকজন নিজের চেয়ে বেশি যোগ্যতম স্থানে থাকে বা কোনমতে সেখানে অবস্থান করে তাহলে নিজের মেধা, মনন, সৃষ্টিশীল প্রতিভা ,কর্মস্পৃহা ,উৎসাহ ,উদ্দীপনা রঙ-ঢঙ ,জৌলুস, উন্নতি, অগ্রগতি কোন কাজে আসে না তেমনি একটি সুন্দর সুস্থ চাকরিজীবী হয়ে যায় একটি জড় অপদার্থের অবিকল ছবি।
নিভৃতে, নির্জনে ,দরজা বন্ধ করে কর্মস্থলের এক কোণে বসে নিজের প্রতিচ্ছবি নিজে দেখে অশ্রু দিয়ে নিজের মেধাকে ভাসিয়ে দেয় শত শত অফিসার। একথা পৃথিবীর কে না জানে। পদোন্নতি বিহীন কর্মজীবন একটি ভল্লুকের জীবনের চেয়েও যে অগোছালো এবং অস্থির তা তারাই একমাত্র বোঝে।
যে সমাজ, গোষ্ঠী ,আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব চাকুরীতে নিয়োগের পরদিন অভিনন্দন জানিয়ে ছিল! পদোন্নতি ছাড়া কর্মজীবনের শেষ দিনে সেই তারাই যে কত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য আর অবজ্ঞা করে তার কোন ইয়াত্তা নেই।
পদোন্নতিবঞ্চিত, অবহেলিত তকদির আলীদের ওই সময়ে ছেলে মেয়ে বিয়ে দেওয়া যে কত দুর্বিষহ, কত লজ্জার, অপমানের এটি শুধু গুটিকয়েক তকদির আলীরাই বলতে পারবে।
পাশাপাশি তদবির মন্ডল শূন্যতার কল্পনায় হাততালি দিয়ে গভীর রাতের জোসনার সাথে কল্পনার যে মহাআনন্দে লিপ্ত থাকে তার ফলাফল হাম্বা ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড কোম্পানির দেউলিয়াত্বের মতই প্রকাশিত হয়। কিন্তু সেটা অনেক পরে
আর ইতোমধ্যেই তকদির আলীদের বুকের কান্নায় হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে যায়, মাথার চুল উঠে যায়, ডিপ্রেশনে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়, সম্মান এর অভাবে প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে দিতে পারেনা, পদোন্নতি না পাওয়ার লাঞ্ছনায় শেষ বয়সে অসুস্থ আর মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে বেঁচে থাকতে হয়।
কিন্তু তকদির আলী, তদবির মন্ডল অবসরে দুজনেই আবার পরিচয় দেয় আমরা হাম্বা ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড কোম্পানিতে চাকরি করেছি। তারা আবার একসাথেই চলাচল শুরু করে। বিধির একই নিয়মে কবর যাত্রা করে। সে যাত্রায় কোন পার্থক্য থাকে না।
একই পোশাক সমপরিমাণ জায়গাতেই যেতে হয় অন্যের কাঁধে ভর করে !!!?? কিন্তু এ দিনের কথা চাকরির প্রথম দিনে মণ্ডলদের মনে পরেনা।