উম্মে খাদিজাতুন্নেছা মাহবুবা মালয়েশিয়া থেকে:
প্রতিবছরই লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে পরিবারকে রেখে পাড়ি দিচ্ছেন প্রবাসে। লক্ষ্য শুধু একটাই পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো। আর সে হাসি ফোটানোর জন্যই অনিশ্চিতের দিকে পা বাড়াতে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশিকে। তেমনি মোঃ আশরাফ আলী (৪১) এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তিনিও বুক ভরা আশা নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন সুদূর প্রবাসে। গত ৩০ নভেম্বর ২০২২ সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেন। কয়েক মাস যেতে না যেতেই তিনি মালয়েশিয়ায় ৫ জুন ২০২৩ তারিখে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন এবং মুমূর্ষু অবস্থায় সকাল দশটায় হসপিটাল সুঙ্গাই বুলহ, সেলানগর এ ভর্তি করানো হয়েছিল। তিনি মারাত্মকভাবে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন বলে কর্মরত চিকিৎসক জানান। তিনি চিকিৎসারত অবস্থায় ১৪ জুন ২০২৩ মালয়েশিয়ান সময় দুপুর দুইটাই মৃত্যুবরণ করেন। নিহতের পিতার নাম মোঃ মোমিনুর রহমান । নিহতের বাড়ি যশোর জেলার চৌগাছা থানার চাঁদপাড়া গ্রামে। নিহতের পরিবার জানিয়েছেন ৬ মাস ২০ দিন পূর্বে তিনি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। অন্যদের মতোই তিন পুত্র সন্তানের জনক মোহাম্মদ আশরাফ আলী ও বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎই পরিবারের উপর নেমে আসে দুর্যোগ। এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য পরিবারের কেউই প্রস্তুত ছিলেন না। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় হাসপাতালের ও অন্যান্য খরচ বহন করা সম্ভব ছিল না। এমনকি স্বজনের লাশকে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াও ছিল তাদের অজানা। ঠিক সেই মুহূর্তে মেহেদী হাসান (মালয়েশিয়া প্রতিনিধি ) এর উদ্যোগে অসহায় এ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এগিয়ে আসেন কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশী। তাদের প্রচেষ্টায় সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অবশেষে তারা মৃত আশরাফ আলীর মৃতদেহ বাংলাদেশে পাঠাতে সক্ষম হন। নানা ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও নিহতের লাশ পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। পরিবার ও নিহতের স্বজনদের আকুল আবেদন ছিল যেন মৃত আশরাফ আলীকে তার নিজের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়।অবশেষে নানান চড়াই উতরাই পেরিয়ে প্রবাসীর লাশ ৯ আগস্ট২০২৩ তারিখে তার স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। সর্বশেষ জানা যায় যে, ০৯ আগস্ট ২০২৩ দুপুর ১২ টায় নিহতের নিজ গ্রামে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয় । রেমিটেন্স যোদ্ধা মৃত মোঃ আশরাফ আলী এর এই অকাল মৃত্যুতে তার পরিবার ও গ্রামবাসী শোকাহত।