মেহেদী হাসান
মালয়েশিয়ায় বৈধ ভিসা থাকার পরও বেওয়ারিশ তকমা নিয়ে সমাহিত হয়েছেন রেমিটেন্সযোদ্ধা কুমিল্লার শাওন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তিন মাস কুয়ালালামপুর হাসপাতালে চিকিসাধীন অবস্থায় গতবছরের মার্চের ৩ তারিখে আইসিউতে মৃত্যু হলে ১৫ এপ্রিল বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন হয় কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির গৌরীপুরের হাটচান্দিনা গ্রামের আবু তাহের এর ছেলে মোহাম্মাদ শাওনের।
সাধারণত মালয়েশিয়ার হাসপাতালে কোন বিদেশী নাগরিকের মৃত্যু হলে হাসপাতালের বকেয়া বিল পরিশোধ না হলে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয় না।
তাহলে কিসের ভিত্তিতে হাসপাতালের বকেয়া প্রায় ১৮ লাখ টাকার বিল (৭০ হাজার রিঙ্গিত) অপরিশোধিত থাকার পরও বৈধ ভিসা থাকতে শাওনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হয় এমন প্রশ্ন তুলছেন মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ কমিউনিটি।
মালয়েশিয়া প্রবাসী শেখ আসাদুজ্জামান মাসুম নিজ উদ্যেগে শাওনের চিকিৎসার জন্য সাহায্য তুলে ৯হাজার মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত পরিশোধ করেছেন।
পরিবরের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ৯ বছর পূর্বে মালয়েশিয়ায় পারি জমান শাওন। নানা চড়াই উতরা পেরিয়ে সুখের মুখ দেখেছিলেন শাওন। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন দেশে গিয়ে বিয়ে করবেন।
এর মধ্যে গতবছরের ২৭ আগস্ট স্থানীয় চাইনিজ নাগরিকের ছুটা কাজ করতে গিয়ে ৫ তলা ভবন থেকে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। দ্রুত ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা উদ্ধার করে কুয়ালালামপুর হাসপাতালে ভর্তি করান। সুযোগ বুঝে লাপাত্তা হন সেই চাইনিজ নাগরিক। অন্যদিকে ব্যক্তিগত কাজে গিয়ে আহত হওয়ায় এর দায় নেয়নি শাওনের কোম্পানীর মালিক। তবে বৈধ ভিসা থাকলে মালয়েশিয়ার শ্রম আইনুযায়ী মালিক কোনভাবেই দায় এড়াতে পারেন না।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দুতাবাসে যোগাযোগ করলে শ্রম কাউন্সেলর মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, আজই দুতাবাস এ বিষয়ে অবগত হয়েছে। এছাড়া বৈধ ভিসাসহ মূল পাসপোর্ট দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েও কিভাবে বেওয়ারিশ লাশ দাফন হলো সেই প্রশ্ন খোদ হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের। দুতাবাস কিছুই জানেনা বলে দাবী করলেও শাওনের লাশ দাফনের আগেই দুতাবাসের কল্যাণ সহকারী মকসেদ আলী যিনি লাশ পাঠানোর দায়িত্বপালন করেন তাকে জানিয়েছিলেন শেখ আসাদুজ্জামান মাসুম।
এদিকে মৃত শাওনের মা শিরিন বেগম বিলাপ করে বলেন বাংলাদেশ দুতাবাস জানার পরও কোন প্রকার সহায়তা না করায় আমার ছেলের পাসপোর্ট ভিসা থাকতে বেওয়ারিশ হিসেবে মালয়েশিয়ায় দাফন হলো। মা হয়ে ছেলের মৃত মুখটাও দেখতে পেলাম না। আর কোন মায়ের এমন পরিস্থিতি যেন না আসে।