অনলাইন ডেস্ক :
তার আবেদন ঐ সীমান্তের নিকট হে সীমান্ত তুমি আমাকে অর্থ ফেরত না দিলেও সুস্থ্য জীবন ফেরত দাও একজন ছাত্রের জীবন ফেরত দাও একটি ভবিষ্যত সমাজকে রক্ষা কর একজন কৃষকের প্রতি সমবেদনা দেখাও প্রতিবেশীকে পানি দিতে না পার ফেন্সিডিল দিও না
নাম- আলমি আতা (ছদ্মনাম)বয়স (২৫), পিতা- কৃষক,গৃহিনী মাতা আমিনা খাতুনের (ছদ্মনাম) ২য় সন্তান তিনি, ফেন্সিডিল করিডোর ধলদা গ্রামের পাশে ১৯৮৯ সালে জন্ম। যশোরের ২০০৬ সালে টিআর এন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে এসএসসি ও ২০০৮ সালে শার্শা উপজেলা কলেজ হতে এইচএসসি পাশ করেন। পিতার ইচ্ছানুযায়ী ২০১৬ সালে যশোর এমএম কলেজ হতে অনার্স (সমাজ বিজ্ঞান) শেষ করে ঢাকা কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি হয়।
এখানেই তার জীবনের গতি থেমে যায়। সে ২০১৬ সালে কোন একদিন তার বন্ধু টেপার হাত ধরে গাঁজা সেবন করে মাথা ঘুরতে ঘুরতে অসুস্থ্য হয়ে বমি করে এবং রাত্রে ঐ বন্ধুর বাসাতেই রাত্রি যাপন করে।
শুকনো গাঁজার ভার বহন করতে না পেরে যশোরের সহজলোভ্য, দামী, যুবসমাজের কাছে লোভনীয় তরল নেশা ফেন্সিডিলের জগতে প্রবেশ করে। কলেজের ভর্তির টাকার জন্য তার মালয়েশিয়া থাকা বড় ভাই লিকনের পাঠানো ৪৮০০/- টাকার মধ্যে থেকে ১৮০০/- টাকা দিয়ে সে, টেপা ও গদখালীর নেশাগ্রস্থ আসাদ তিন বোতল ফেন্সিডিল খেয়ে ঘুমিয়ে থাকে। নির্ধারিত সময়ে কলেজে ভর্তি হতে না পেরে তার কৃষক বাবার কাছ থেকে এক মণ ধান চুরির অর্থ দিয়ে জরিমানার তারিখে ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত কবি মাইকেল এর কলেজে ভর্তি হয়। এতে প্রথম দিকে তার পেটে ব্যাথা, ঘুম ঘুম ভাব, ক্ষুদা না লাগা ও লেখা-পড়ায় অমনোযোগীসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এতে তার ভবিষ্যত অন্ধকার ও লক্ষ্যহীন হয়ে পড়ে।
এভাবে চলতে থাকে তার ঘুমিয়ে থাকা জাগরিত ছাত্র জীবন। এমএম কলেজের ছাত্র জীবনের খরচ আসতে থাকে মালয়েশিয়া এবং কৃষক বাবার কাছ থেকে। নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে মিথ্যা কথা বলে এভাবেই দিগুন খরচ নিত পরিবার থেকে।
২০১৭ সালে গোয়েন্দা শাখার মাদক বিরোধী অভিযান “Frontier Drug Catastrophe” (সীমান্তে মাদক দমন) চলাকালে শাহীনকে ফোটায় ফোটায় ফেন্সিডিল পানরত অবস্থায় আটক করে গুগার সীমান্তে। সে অবস্থায় ডিবি পুলিশকে করজোড়ে অনুরোধ করে, “ভাই আমার বন্ধু আসাদ ২৩০০/- টাকার বিনময় এক বোতল ফেন্সিডিল দিয়েছে পুরোটুকু খাওয়ার সুযোগ দিন। পুলিশ তার নিকট হতে ফেন্সিডিলের অবশিষ্ট পরিমান নিতে গেলে কৌশলে খেয়ে ফেলে।
গোয়েন্দা অফিসে এভাবেই বর্ণনা করে তার নেশার জীবন। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে সে সুন্দর মানুষের মত জীবন-যাপন করতে চায়। নেশার অন্ধকারে ঘুমিয়ে থাকার জন্য দায়ী করে বন্ধু টেপা ও মাদক ব্যবসায়ী আসাদকে। গোয়েন্দা অফিস থেকে পিতার কাছে তার একটি অনুরোধ; কৃষকের ঘামের টাকা দিয়ে সীমান্ত পাড়ের নেশার তরল ক্রয় করে পিতা, শুধু পিতারই নয়, ভাই, পরিবার ও সমাজের সাথে অকৃতজ্ঞতা করেছি। রাষ্ট্রের অর্থ দিয়েছি সীমান্তে ওপাড়ে,প্রতিবেশী দেশ ধনী হয়েছে।
তার আবেদন ঐ সীমান্তের নিকট হে সীমান্ত তুমি আমাকে অর্থ ফেরত না দিলেও সুস্থ্য জীবন ফেরত দাও একজন ছাত্রের জীবন ফেরত দাও একটি ভবিষ্যত সমাজকে রক্ষা কর একজন কৃষকের প্রতি সমবেদনা দেখাও প্রতিবেশীকে পানি দিতে না পার ফেন্সিডিল দিও না।
লেখক:
মোঃ ইমাউল হক পিপিএম ইন্টেলিজেন্স এন্ড মিডিয়া সেল ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন কক্সবাজার।