ফেনী প্রতিনিধি :
ফেনীর সোনাগাজীতে জনতার হাতে ৪ ইয়াবা ব্যবসায়ী আটক!
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ৮ নং আমিরাবাদ ইউনিয়নের রহমত নগর হালিম হুজুর বাড়ি এলাকা থেকে ৪ জন পাইকারি ইয়াবা ব্যবসায়ীকে হাতেনাতে ধরে পেলে এলাকার সচেতন মানুষ।
মঙ্গলবার (১১ই আগস্ট ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমিরাবাদ ইউনিয়নের ৬ নাম্বার ওয়ার্ডের একজন ডাকাতি মামলার সাজাপ্রাপ্ত এবং ইয়াবা ব্যবসায়ী স্বপন প্রকাশ জগত থেকে ইয়াবা কিনে নেয় একই ইউনিয়নের ৫ নাম্বার ওয়ার্ড দাগণপাড়ার নুর করিমের ছেলে রসুল আহমেদ প্রকাশ মামুনসহ তার সহযোগী আরো তিনজন। এলাকার মানুষ দাবী করে বলেন
ইয়াবা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ইয়াবা কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় রসুল আহমেদ প্রকাশ (মামুন) নামের ওই পাইকারি ও তার সাথে থাকা আরো তিনজন কে আটক করে এলাকাবাসী। এলাকার প্রত্যক্ষ দর্শীরা জানায়, মামুন ও তার সাথে থাকা তিনজন কে ইয়াবাসহ হাতেনাতে ধরারপর একপর্যায়ে ধস্তাধস্তি শুরু হয়।তার মধ্যে মামুনের কাছে থাকা ইয়াবাগুলো রাস্তার বাহিরে পেলে দেয় মামুন এবং তার সহযোগী তিনজনকে ইয়াবা ও গাজাসহ আটক করে। এলাকায় লোকজন আরো জানায়, তারা ইয়াবা ব্যবসায়ী মামুন কে হাতে নাতে ধরে পেলে। তখন তার গায়ে সাদা রঙ্গের একটি সাদা গেঞ্জিও পরা ছিলো। তবে ইয়াবা ব্যবসায়ী মামুনের দেওয়া ভিডিও সাক্ষাৎরে এলাকাবাসীর সামনে আমিরাবাদ ইউনিয়নের ৫ নাম্বার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোলাম কিবরিয়া শামীমের কথা বলতে শুনাগেছে।
তথ্য সুত্রে জানা যায়,২০১৮ সালে গোলাম কিবরিয়া শামীমের এক সহযোগী কে ইয়াবাসহ হাতে নাতে ধরে পুলিশ। তখন ইয়াবা নিয়ে পুলিশের হাতে আটক হওয়া আসামীর মুখেও তার জড়িত থাকার কথা উঠে আসে। উল্লেখ যে এই ইউপি সদস্য গোলাম কিবরিয়া শামীমের বিরুদ্ধে তখনই সোনাগাজী মডেল থানায় ২০১৮ সালের ২৭ শে জুলাই একটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। যার এফআইআর নং ২৩/১৪৩।
গত মঙ্গলবার রাতে রসুল আহমদ মামুন ইয়াবাসহ রহমত নগর এলাকাবাসীর হাতে আটক হয়েছে এমন খবর শুনে ঘটনাস্থলে তাড়াতাড়ি ছুটে যান আমিরাবাদের দুই ইউপি সদস্য, গোলাম কিবরিয়া শামীম এবং আব্দুল বারেক প্রকাশ আরু মিয়া। তারা ঘটনাস্থলে পৌছে এলাকাবাসীর হাতে আটক হওয়া মামুন কে রক্ষা করতে এলাকার লোকজনকে হুমকি ধমকি দিয়ে নানারকম ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের জিম্মায় মামুনকে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। রসুল আহম্মদ মামুন এলাকাবাসীর হাতে ইয়াবা নিয়ে আটক হওয়ার সাথে সাথে তারা সোনাগাজী মডেল থানার পুলিশ কে জানায়। এলাকার লোকজন পুলিশ কে জানালেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই দুই ইউপি সদস্য এলাকার লোকজনকে ভয় দেখিয়ে তাকে নিয়ে যায়।মামুনের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ ও মামলাও রয়েছে সোনাগাজী মডেল থানায়। আর তিন জনকে ইয়াবা ও গাজাসহ সোনাগাজী মডেল থানার পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের ৬ নাম্বার ওয়ার্ডের চরলামছি এলাকার সচিব মিলনের আপন ভাই স্বপন প্রকাশ জগত নামে এক মাদক বিক্রেতার কাছ থেকে মোটরসাইকেল ও টমটম- অটোরিকশা নিয়ে ইয়াবা কিনতে যেতো বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি স্থানীয়রা জানতেন, কিন্তু কিছু বলার সাহস পেতেন না। বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে জনগণ প্রতিবাদ করার সাহস পায়।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০ টার সময় স্থানীয় হালিম হুজুরের বাড়ীর পাশে দাঁড়ানো এলাকাবাসী অটোরিকশা নিয়ে দ্রুতবেগে রসুল আহমদ মামুন ও তার সাথে থাকা আরো তিনজনসহ স্বপন প্রকাশ জগত নামের ওই মাদক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলতে দেখেন। তারা তাৎক্ষণিক এলাকাবাসীর লোকজন চ্যালেঞ্জ করলে তারা পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় মামুন ও তার সাথে থাকা তিনজন সহযোগীদের কাছে ইয়াবা এবং গাজা ইয়াবাসহ ধরা পড়ে সবাই। এলাকাবাসী তাদের ৪ জনকে আটকে রেখে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ আসার আগেই এলাকাবাসীর হাতে আটক হওয়া চারজনের মধ্য হতে একজন রসুল আহমদ মামুন কে শামীম মেম্বার ও আরু মিয়া নিয়ে যান। বাকি তিনজনকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকেই থানায় নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে চরলামছি গ্রামের নাম না প্রকাশ করা শর্তে এক ব্যক্তি জানান, স্থানীয় বখাটে স্বপন প্রকাশ জগত দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। এলাকাবাসী তার সাথে বিভিন্ন সময় মাদক কেনাবেচার জন্য লোকজনের আনাগোনা দেখেও ভয়ে কিছু বলেনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মাদকবিরোধী অভিযানের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকাবাসী সাহস পায়।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো: সাজেদুল ইসলাম জানান, এলাকাবাসী ইয়াবাসহ তিনজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক রেখেছে মোবাইলে এ ধরনের খবর পেয়ে সোনাগাজী মডেল থানার একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। আটক মাদক ব্যবসায়ীদের থেকে ইয়াবা পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন ওসি।
চারজনের মধ্যে তিনজন কে পুলিশ ধরলো আর একজনকে কেন ছেড়ে দিলেন?এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, পুলিশের কাছে তিনজন আটকের তথ্য দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে ইয়াবাসহ যাদের পেয়েছে তাদের গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মাদক মামলা দায়ের করেছি।
এলাকাবাসীর হাতে আটক হওয়া চারজনই ভিডিও ফুটেজে দেখা গেলেও একজন পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাহিরেই থেকে গেলো!
ইতিমধ্যে আরেক জন পলাতক রসুল আহম্মদ মামুনকে ধরার একটি ভিডিও ফুটেজও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
তবে ওসি সাজেদুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের সচেতনতার ঘটনায় এলাকাবাসী অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।