ফেনী প্রতিনিধি
ফেনীর আল-বারাকা হাসপাতালে রোগীর অভিভাবকদের না জানিয়ে নার্স দিয়ে ভুল সিজার অপারেশন করে রোগীর পায়ুপথ কেটে রোগীকে হয়রানি ও হুমকি দেয়ার ঘটনায় ফেনীর সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী রোগীর অভিভাবক। বর্তমানে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাসপাতালের এমডির কাছে অভিযোগ দিলে তিনি উল্টো হুমকি দিয়েছে বলে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ। গত ৭ অক্টোবর শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে অবস্থিত ফেনী আল-বারাকা হাসপাতাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারে এঘটনা ঘটে। ঘটনার একমাস পর গত ৯ নভেম্বর রোগীর বাবা সোনাগাজীর বক্তারমুন্সীর ওসমান আলী কারী সাহেবের বাড়ি শাহ আলম ফেনী সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে শাহ আলম উল্লেখ করেন, গত ৭ অক্টোবর আমার গর্ভবতী মেয়ে মেহে ও দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের তোফায়েল আহাম্মদ তপুর স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের প্রসব বেদনা উঠলে তাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য আল বারাকা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফাহমিদা ইয়াসমিনের কাছে নিয়ে আসি। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিন বিকাল ৫টার দিকে ওই হাসপাতালের নার্স লিপি আমাদের কারো কোন অনুমতি না নিয়ে চিকিৎসক ছাড়া অস্ত্রপাচার করে বাচ্চা প্রসব করান। এ সময় রোগীকে সেলাই করতে গিয়ে নার্স লিপি পায়ুপথসহ সেলাই করে দেন। পরের দিন মেয়েকে হাসপতাল থেকে আমাদের বাড়ি নিয়ে আসলে সে বিশেষ অঙ্গে গুরুতর ব্যথা অনুভব করতে থাকে।
শাহ আলম জানান, তখন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফাহমিদা ইয়াসমিনকে দেখালে তিনি তাকে একমাসের ঔষধ প্রদান করেন। ঔষধ সেবনের পনেরদিন পর ব্যাথা না কমায় আবার তাকে দেখালে তখন তিনি জানান, সিজারের কারণে তার এ সমস্যা দেখা দিয়েছে যা অপারেশন করেও পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। এরপর এ ব্যাপারে ওই নার্সের বিরুদ্ধে আমি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হেলালকে জানালে তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। বরং আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন ও মারধোরের হুমকি দেন।
অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হেলাল উদ্দিন বলেন, গত ৫/৬দিন আগে ওই রোগীকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে এসে তাদের সমস্যার কথা জানান। ডা. ফাহমিদা রোগীকে দেখে সেলাই খুলে যাবার জন্য ইনফেকশন হওয়ায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানান। এটি কোন গুরুতর সমস্যা নয়, নিয়মিত পরিচর্যা ও ঔষধ খেলে সেরে যাবে বলে তাদের আশ্বস্ত করেন।
হেলাল উদ্দিন জানান, রোগীর অসাবধানতার কারণেই এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন গাফিলতি নেই বলে তিনি দাবী করেন। একই সাথে হুমকি দেয়ার ঘটনাটি তিনি অস্বীকার করেন।
অভিযোগের ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন জানান, ব্যাপারটি তদন্তের জন্য সিভিল সার্জনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শরফুদ্দিন মাহমুদ ও ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. রোকসানা বেগম স্বপ্না সমন্বয়ে দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে চলতি বছরের মে মাসে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায়ও তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলো সিভিল সার্জন অফিস। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শুনানীর জন্য আগামী ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডাকা হয়েছে।