উত্তরণ অনলাইন ডেস্ক :
দীর্ঘশ্বাসের প্রার্থনা আর আবেদন ভারী বাতাস ভেদ করে উপরে উঠতে উঠতে এক সময় মঞ্জুর হবেই।সে আশাতেই প্রতিটি মানুষ এই দুর্যোগের ঘনঘটার মধ্যেও নিজের বুকের ভিতর প্রানটা ধরে রেখে বাঁচার যুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে।
পৃথিবীর যত বড় নায়ক, রাজা মহারাজা, পন্ডিত, ক্ষমতাশীল, ক্ষমতাবান ,বিশ্বের রাজার রাজা ,রাজা ধীরাজ, সবচেয়ে সুখী ,সুন্দর,সুঠাম স্বাস্থ্যের অধিকারী, জজ, ব্যারিস্টার, ডাক্তার, উকিল, মোক্তার, ফ্যাশন বয়, বডি বিল্ডার যে কোন ব্যক্তির যদি তিন দিন একটানা পাতলা পায়খানা হয় তাহলে সে বিছানায় শুয়ে থাকতে বাধ্য অথবা হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য।
তাহলে অর্থ কি দাঁড়ায়? শরীর সুস্থ থাকলে মন সুস্থ থাকে। মেধা কাজ করে, সে কাজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হয়। সে মাধ্যমে কিছু অর্জন ও সফলতা আসে ।তার বিনিময়ে ব্যক্তি, সমাজ, পরিবার ও দেশ কিছু পেয়ে থাকে।।
বিশ্বে দুই বছর হল প্রতিটি নাগরিকই প্রায় একের পর এক অসুস্থ হচ্ছে। একজন আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সংস্পর্শে অন্যজন এলেই সেও আক্রান্ত। করোনার সংক্রমণে পাশাপাশি ডেস্কে বসে অফিস অথবা যানবাহনে যাতায়াত করলেই আক্রান্ত থেকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক আকারে বেড়েই চলছে।
এ রোগের প্রতিষেধক স্বল্প, তাতেও কাজ হচ্ছে না।,প্রতিরোধ করা দুরহ! এ রোগের চিকিৎসক নাই।যিনি চিকিৎসা দেবেন তিনিও আক্রান্ত হয়ে যান। অসুস্থ হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কঠিন। যিনি ভর্তি করবেন, দেখাশোনা করবেন তিনিও আক্রান্ত হয়ে যান । অন্য রোগে হাসপাতাল এ গেলে তিনি ও করো না আক্রান্ত হয়ে যান। মহামারীর এই যুগে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই আতঙ্কিত, প্রতিটি বীরপুরুষ ভীতসন্ত্রস্ত।রক্তের সম্পর্কের ও কেউ আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে ফিরে তাকাবার সময়ও নেই ,, জ্ঞান নেই ।এমনকি সৎকারের কোন চিন্তা নেই ,নিজে অ- স্পর্শে থেকে নিজেকে রক্ষা। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সবাই ব্যস্ত।থেমে আছে অফিস-আদালত। মানুষের চলাচল চিকিৎসা। টাকা লেনদেন, ভ্রমণ,স্বাভাবিক কর্ম,ব্যবসা বাণিজ্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। এসকল সাংসারিক ও জীবনের অংশ নিয়ে মানুষ চিন্তিত ।নিশ্বাসে নিশ্বাসে দীর্ঘশ্বাস প্রতি ঘন্টায় ,ঘন্টায়।
কিন্তু থেমে নেই চুরি, ছিনতাই ,ধর্ষণ প্রতারণা!ডিজে পার্টি!তাহলে তারা কারা। তারা কি বীরদেরও বীর? না তাদেরও দীর্ঘনিঃশ্বাস আছে! তাদের নিঃশ্বাসে বিশ্বাস নেই। তাদের দীর্ঘশ্বাসে আস্থা নেই, প্রার্থনা নেই।তাদের ভয় নেই ,দুশ্চিন্তার কম্পন নেই,নেই কোন মানবিকতা।
প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যুর সংখ্যা টালি দিতে দিতে, হিসাব করতে করতে এখন খুব স্বাভাবিক মনে হয়। একটা দুঃসংবাদ হয় আর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে তার পরিবার, স্বজন। সারাদিন তো অন্তত এ সকল মানুষ গুলো একাধিকবার প্রশ্ন করে কমবে কবে ?করোনা যাবে কবে? স্বাভাবিক পরিস্থিতি আসবে কবে? কিন্তু একই পরিস্থিতি প্রতিদিন কমে বাড়ে । ক্ষণে, ক্ষণে মানুষ চিন্তিত ,দুর্বল ,হতাশ উদ্বিগ্ন ।নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত, বেঁচে থাকা, নিজের মৃত্যুর পর পরিবার নিয়ে চিন্তিত।মরনের পর জানাযা নিয়ে শঙ্কিত। দীর্ঘশ্বাসের প্রার্থনা আর আবেদন ভারী বাতাস ভেদ করে উপরে উঠতে উঠতে এক সময় মঞ্জুর হবেই। সে আশাতেই প্রতিটি মানুষ এই দুর্যোগের ঘনঘটার মধ্যেও নিজের বুকের ভিতর প্রানটা ধরে রেখে বাঁচার যুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে।
সত্যি দুটি জিনিস হতে পারে।জন্মের পরে একটি স্বাদ আস্বাদন অনিবার্য সেটি হচ্ছে মৃত্যু।এ দীর্ঘশ্বাসের গন্তব্যে প্রতিটি মানুষের করোনা আক্রান্ত হলে অধিক বিপদ হতে পারে। তার চেয়ে ঢের বেশি মানুষের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা। সৃষ্টিকর্তার প্রতি দীর্ঘশ্বাস সর্বোচ্চ আনুগত্যের প্রমান ।বড় কথা হল দীর্ঘশ্বাস আত্মসমর্পণের প্রতিনিধিত্ব করে এবং নিজেকে রক্ষা করার সর্তকতা যেমন বুঝায়, সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে রক্ষার আবেদন ও বুঝায়।
কিন্তু যাদের এই নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে আস্থা নেই অনাচার অবিচার আর বেপরোয়া করে যাচ্ছে। তাদের শিক্ষা নেওয়ার আছে। মহামারী সৃষ্টিকর্তার পরীক্ষা। জানিনা সে পরীক্ষায় কেমন ফলাফল আসবে। তবে দীর্ঘ নিঃশ্বাস যেন নিজেকে আত্মসমর্পণ করার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করতে পারি, সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের সবাইকে অবিচল আস্থা রাখতে হবে।
লেখক-
ইমাউল হক পিপিএম ইনটেলিজেন্স ইন্সপেক্টর ১৪ এপিবিএন কক্সবাজার