আজ || শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
শিরোনাম :
  ফেনীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে আনসার বাহিনীর ধানের চারা বিতরণ       ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের মুটিং সোসাইটির উদ্যোগে মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্ট অনুষ্ঠিত       ফেনীতে দলীয় কোন্দল, নেতা-কর্মীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে জেলা বিএনপি       ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ারে সেনাবাহিনী যা যা করতে পারবে       ৬০ দিনের জন্য সারাদেশে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেল সেনাবাহিনী       ফেনীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, দুই সংবাদকর্মী সহ আহত ১২       ১৪ দিনে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এলো ১৪ হাজার কোটি টাকা       কুমিল্লা ও ফেনীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে আনসার মহাপরিচালকের আমন ধানের চারা বিতরণ       বাহরাইনে দেশীয় সংস্কৃতিতে বিয়ে, উচ্ছ্বসিত প্রবাসীরা বাংলাদেশিরা!       রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ করেন মুনছুর ভূইয়া    
 


পিলখানা বিডিআর বিদ্রোহের এক যুগ  পূর্ণ হচ্ছে আজ

বিশেষ প্রতিনিধি :

পিলখানা বিডিআর বিদ্রোহের এক যুগ
পূর্ণ হচ্ছে আজ

পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরের নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পূর্ণ হচ্ছে আজ (২৫ ফেব্রুয়ারি) বৃহস্পতিবার । হত্যাযজ্ঞে ৫৭ জন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া খুনের মামলার বিচার তিন বছর আগে হাইকোর্টে শেষ হয়েছে।

দিনটি উপলক্ষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও সেনা সদর নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বিজিবি ও আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের কর্মসূচির কথা জানানো হয়।

আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে সেনাবাহিনীর শহীদ সদস্যদের শাহাদাতবার্ষিকী পালন করা হবে। এ উপলক্ষে বনানী সামরিক কবরস্থানে শহীদ সেনা সদস্যদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে সকাল ৯টায়। সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানগণ (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে) শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

অন্যদিকে, বিজিবি’র সদর দফতর পিলখানা থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদদের স্মরণে কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদদের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে পিলখানায় বিজিবির সদর দফতরসহ সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় কোরআনখানি হবে। বিজিবি’র সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। দিনটি পালন উপলক্ষে বিজিবি’র যেসব স্থানে রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন হয়, সেসব স্থানে বিজিবি পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং বিজিবি’র সব সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করবে। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) বাদ জুমা পিলখানায় বিজিবির কেন্দ্রীয় মসজিদ, ঢাকা সেক্টর মসজিদ এবং বর্ডার গার্ড হাসপাতাল মসজিদে শহীদ ব্যক্তিবর্গের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। ওই দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, বিজিবি মহাপরিচালক, শহীদদের নিকটাত্মীয়, পিলখানায় কর্মরত সব অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবির সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মচারীরা অংশ নেবেন।

সেদিন যা ঘটেছিলঃ
দরবার হল থেকে বিদ্রোহ শুরু: মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ছিল বিডিআরের বার্ষিক দরবারের দিন। অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল নয়টায় সদর দপ্তরের দরবার হলে। সে সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, উপমহাপরিচালক (ডিডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এ বারী, বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাসহ বিডিআরের নানা পদের সদস্যরা। সরকারি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে, ওই দিন দরবারে উপস্থিত ছিলেন ২ হাজার ৫৬০ জন। দরবার শুরুর পর ডিজির বক্তব্য চলাকালে সকাল ৯টা ২৬ মিনিটে মঞ্চের বাঁ দিকের পেছন থেকে দুজন বিদ্রোহী জওয়ান অতর্কিতে মঞ্চে প্রবেশ করেন, একজন ছিলেন সশস্ত্র। শুরু হয় বিদ্রোহ। দরবার হলের বাইরে থেকে গুলির আওয়াজ ভেসে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যে লাল-সবুজ রঙের কাপড় দিয়ে নাক-মুখ বাঁধা বিদ্রোহী জওয়ানেরা দরবার হল ঘিরে গুলি শুরু করেন। ডিজি নিজে প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানসহ অন্যদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে দ্রুত সেনা হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্রোহীরা কর্মকর্তাদের দরবার হল থেকে সারিবদ্ধভাবে বের করে আনেন। ডিজির নেতৃত্বে কর্মকর্তারা দরবার হলের বাইরে পা রাখা মাত্র মুখে কাপড় ও মাথায় হলুদ রঙের হেলমেট পরা চারজন ডিজিকে লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করেন। ডিজির পর হত্যা করা হয় আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে।

এরপর পিলখানার ভেতরে ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট ছাড়া হলে ওই হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন বিদ্রোহীরা। এ সময় প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে বিদ্রোহীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। তাঁরা মাইকে জানান, আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পিলখানায় আসতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে বিদ্রোহীদের নিরস্ত্রীকরণের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বেলা দেড়টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সাদা পতাকা নিয়ে পিলখানার ৪ নম্বর ফটকের সামনে যান প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও হুইপ মির্জা আজম। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ১৪ সদস্যের বিডিআর প্রতিনিধিদলকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নানক সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন এবং অস্ত্র জমা দিয়ে ব্যারাকে ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সন্ধ্যা সাতটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণাকে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের দাবি করেন বিদ্রোহী জওয়ানেরা। তাঁরা আগের মতো উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করেন। সন্ধ্যায় পিলখানার বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের লাশ মাটিতে পুঁতে ও সরিয়ে ফেলা হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি বেলা আড়াইটায় টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারিত জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণ করে ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে। এরপর বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণ শুরু করেন।

 


Top