অনলাইন ডেস্ক :
নানা সূচকে বিশ্বের রোল মডেল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। মাতৃমৃত্যুর হার কমে আসাও এই অর্জনের অন্যতম। দিনে দিনে বাল্যবিবাহ কমে আসায় কমছিলো মাতৃমৃত্যুর হার। কিন্তু করোনা মহামারির মধ্যে বেড়েছে বাল্যবিবাহ।
মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে ক্রমেই দুর্বিষহ হয়ে উঠছে শিক্ষাজীবন। আর এর বেশি প্রভাব পড়েছে গ্রামের মেয়েদের ওপর। করোনাকালে অভিভাবকের কাজ না থাকা, সন্তানের স্কুল খোলার নিশ্চয়তা না থাকা এবং অনিরাপত্তা বোধ থেকে দেশে বেড়ে গেছে বাল্যবিবাহ। এই সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক মেয়েকেই বয়সের আগে বসতে হচ্ছে বিয়ের পিড়িতে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে মেয়েটির শৈশব, হারিয়ে যাচ্ছে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবার স্বপ্ন।
মেয়েটির ছদ্ম নাম রিপা। নবম শ্রেণিতে মেয়েটি লেখা পড়া করে সে। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবার ইচ্ছা থাকলেও চরম বাস্তবতার কারণে বয়স হবার আগেই তাকে বসতে হয়েছে বিয়ের পিঁড়িতে।
রিপার বসবাস কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়ার প্রত্যন্ত একটি গ্রাম। পরিবারে আছে বাবা-মা আর এক ভাই। বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রী। কিন্তু করোনায় কঠোর বিধিনিষেধে কর্মহীন হয়ে বসে আছেন বাড়িতে। ফলে নেই উপার্জনের পথ। ফলাফল, অল্প বয়সে অন্যের ঘরনী মেয়েটি। একই চিত্র মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার এক গ্রামেও। করোনাকালের এই সংকটে উপার্জন কমে যাওয়ায় স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে বাল্যবিবাহের সংখ্যা। আর সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা মহামারিতে অল্প বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেবার মাধ্যমে কঠিন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
ব্রাকের পরিসংখ্যান বলছে, এ বছরের শুরুতে বাল্যবিবাহের তথ্য আছে ২৮৯টি। যা গত বছরের চেয়ে ঢের বেশি। বাল্যবিবাহ রোধে সামাজিক উদ্যোগ শিথিল হবার কারণে বেড়েছে এই হার। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, দেড় বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা এবং দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ায়, শিক্ষাজীবন ক্রমেই চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে গ্রামীণ কিশোরিদের।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ‘বাল্যবিয়ে’ এবং ‘জোর করে বিয়ে’ বন্ধ করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ।