বিশেষ প্রতিবেদক:
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির শারজাতে একটি সোফা কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে পুড়ে নোয়াখালীর তিনজনসহ চার বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। নিহতদের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোরে শারজার ওই সোফা কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হচ্ছেন, নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ডমুরুয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড তারাবাড়িয়া গ্রামের দুলাল কোম্পানী পাটোয়ারী বাড়ির আবদুল কাদেরের ছেলে মো. ইউসুফ মিয়া (৪৫), একই গ্রামের মীর আহম্মদের বাড়ির মীর হোসেনের ছেলে তারেক হোসেন বাদল (৪২) ও আতর আলী হাজী বাড়ির আবদুল ওহাবের ছেলে মো. রাসেল (২৬)। অপর নিহতের বাড়ি কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট এলাকায়।
সরজমিনে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অসহায় হয়ে বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েছে পরিবারের সদস্যরা। গ্রাম ঝুড়ে নিমে এসেছে শোকের ছায়া। একই গ্রামের তিন ব্যক্তির অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না গ্রামবাসী।
নিহত রাসেলের মা শরীফা বেগম বলেন, দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে রাসেল ছিলো দ্বিতীয়। ঢাকার একটি ব্যাগ কারখানায় চাকরি করে সংসার চালাতো সে। দুই বছর আগে পারিবারিক ভাবে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। দেড় বছর বয়সি একটি কন্যা সন্তান থাকলেও সেও শারীরিক ভাবে অসুস্থ। জীবিকার তাগিদে ও পরিবারের খরচ চালাতে প্রায় ৬-৭ লাখ দারদেনা করে ২০২২ সালে আবুধাবিতে যায় রাসেল। একই এলাকার আরও কয়েকজন থাকায় একটি সোফা কারখানায় চাকির করতো রাসেল। প্রতিদিনের মতো সোমবার রাত ১টার দিকে তার স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজনের সাথে মোবাইলে কথা বলে সে। পরদিন রাতে ডিউটি আছে তাই দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বে বলে মোবাইলে বিদায় নেয় রাসেল। মঙ্গলবার দুপুরে আবুধাবিতে থাকা এলাকার লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে রাসেল মারা গেছে। নিজের ভাঙাছোরা ঘর তারোপর ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে যে পরিমাণ দেনা হয়েছেন তা পরিশোধ কিভাবে করবেন আর সংসার কিভাবে চলবে এমন কথা বলে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন শরীফা বেগম।
নিহত ইউছুফ মিয়ার বড় ছেলে মহিনুল ইসলাম মিলন বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে আবুধাবি যায় তার বাবা ইউছুফ মিয়া। এরপর থেকে সোফা কারখানাটিতে চাকরি করতেন তিনি। সবশেষ গত ৫ বছর আগে দেশে আসার পর ছুটি শেষে পুনরায় কর্মস্থলে ফিরে যান তিনি। গত এক বছর আগে মালিকের কাছ থেকে কারখানাটি ক্রয় করে নিজের দেশের শ্রমিক দিয়ে সেটি পরিচালনা করে আসছিলেন তিনি। দীর্ঘ বছর কষ্ট করে একার আয়ে সংসার চালিয়ে আসছিলেন তিনি। ভালো সময় আসার আগে এমন দুর্ঘটনা আমাদের পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।
এদিকে, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে তারেক হোসেন বাদলকে হারিয়ে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন বাবা মীর হোসেন। চার ছেলের মধ্যে দুই জনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। এরই মধ্যে চলে গেলেন বাদল।
মীর হোসেন বলেন, কয়েক বছর ওমান থাকার পর ভিসায় সমস্যা হওয়ার কারনে গত বছর দেশে ফিরে আসেন বাদল। একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত একজন সহ তার তিন ছেলে রয়েছে। গত ৮ মাস আগে এক আত্মীয়র সহযোগিতায় আবুধাবিতে গিয়ে এলাকার ইউছুফের সোফা কারখানায় চাকরির নেয় বাদল। দুই ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমার সংসার চালানোর দায়িত্ব তার কাঁধে ছিল। বাদল চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমাদের পরিবারের সব শেষ হয়ে গেছে।
নিহতের পরিবার ও স্বজনদের দাবি যেহেতু আগুনে পুড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। শরীরের যেটুকু অংশ রয়েছে সেটুকু যেনো বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
ডুমুরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন কানন বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। ঢাকায় থাকার কারণে নিহতদের বাড়িতে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বুধবার সকালে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে নিহতদের বাড়িতে পাঠিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে।