নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহ সর্বাত্মক লকডাউনের পরিকল্পনা করছে সরকার। এ সময় জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া মানুষকেও ‘পুরোপুরি ঘরে থাকতে হবে’ বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
আজ শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ‘১৪ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য আমরা কঠোর লকডাউনে যাচ্ছি। এটি হবে পরিপূর্ণ-কমপ্লিট লকডাউন। যেখানে মানুষজন সকলেই সহযোগিতা করবেন। বাসায় থাকবেন, বাইরে যাবেন না। চলাফেরা থেকে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সংযত আচরণ করতে হবে।’
সব সরকারি অফিস বন্ধ থাকবে বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই পাবলিক লকডাউনের মধ্যে কোনো অফিস-আদালত খোলা থাকবে না। জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছুই বন্ধ থাকবে। আমরা চাইব এক সপ্তাহ মানুষ সম্পূর্ণ ঘরে থাকবেন। সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে কঠোর লকডাউন আমরা মেনে চলব।’
করোনা সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যাওয়ায় কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশে সর্বাত্মক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত লকডাউনের ঘোষণা দেয় সরকার। জরুরি সেবা ছাড়া শপিং মল, দোকান-পাট, হোটেল-রেস্তারাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে গত বুধবার থেকে গণপরিবহন চলাচলের নিষেধাজ্ঞায় শিথিলতা আনা হয়।
এ ছাড়া লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ রাখার প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের পর আজ শুক্রবার থেকে খুলছে ঢাকাসহ সারা দেশে শপিংমল ও দোকানপাট। স্বাস্থ্য বিধি মেনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত বিপনিবিতান খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসে সর্বোচ্চ ৭৪ জনের মৃত্যু হয়। মহামারির এ পরিস্থিতি থেকে মানুষকে বাঁচাতে সামনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হতে পারে বলে বৃহস্পতিবার সতর্ক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আজ শুক্রবার নিজের সরকারি বাসভবনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে লকডাউনের পর ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ কথা জানান। তবে চলমান ‘লকডাউন’ ও ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ মধ্যে পার্থক্য, এখন যেভাবে লকডাউন চলছে, সর্বাত্মক লকডাউনেও একই পরিস্থিতি থাকবে কিনা এসব বিষয়ে কথা বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ বলতে যে চিন্তাটি করা হয়েছে সেটা হলো শুধু জরুরি সেবা ছাড়া আর কোনো কিছুই চলবে না। এখন যেমন কিছু কিছু বিষয়ে নমনীয়তা দেখানো হচ্ছে, সেটি হয়তো তখন আর করা হবে না।’ দেশের জনস্বাস্থ্যবিদরাও এই পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ঢিলেঢালা লকডাউনে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আর বর্তমান করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও কয়েক সপ্তাহ অব্যাহত থাকলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। কঠোর লকডাউন দেওয়া গেলে হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে বলেই তারা মনে করছে।
এদিকে করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তত দুই সপ্তাহ ‘পূর্ণ লকডাউন’র সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বুধবার রাতে কমিটির ৩০তম সভা হয়। এতে সারা দেশে দুই সপ্তাহ ‘পূর্ণ লকডাউন’ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধিতে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে ১৮টি নির্দেশনা জারি হয়েছিল, সেগুলো সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। তাই ‘বিধিনিষেধ আরও শক্তভাবে অনুসরণ করা দরকার।’
করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষ করে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোয় ‘পূর্ণ লকডাউন’ দেওয়ার সুপারিশ করা হয় ওই সভায়। লকডাউনের দুই সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে সংক্রমণের হার বিবেচনা করে আবার নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে বলে কমিটি জানিয়েছে।